মা দিবস কিভাবে এলো? আমরা কেন মা দিবস পালন করি

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘পার্থিব’ উপন্যাসের একটি লাইন "মানুষ যখন ভয় পায়, যখন বিপদে পড়ে , যখন মনে হয় একা , তখন ভয়ার্ত শিশুর মত মাকে’ই আকড়ে ধরে”। আসলেই মা’র প্রতি অনুভূতিই এমন, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় মা দিবস।


মা দিবস কেমন করে এলো?

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই প্রতিবছর মা দিবস পালিত হয়। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেও অনেক জায়গায় এ দিবসটি পালন করা হতো। তবে তখনকার মা দিবসটা আমাদের বর্তমানের মা দিবসের মত ছিলনা সে সময় দেবীদের মা হিসেবে (যেমন-দেবী আইসিস, সিবিল, রিয়া) পূজা করা হতো। ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো যা ছিল আসল মাকে নিয়ে অর্থাৎ রক্ত-মাংসের মাকে নিয়ে মা দিবস পালন। ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময় এক মায়ের সন্তান অন্য মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল অবলীলায়। জুলিয়া চেয়েছিলেন সব মায়েদেরকে একত্র করতে। এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। মে মাসের ২য় রবিবারকে মা দিবস করার মূলে রয়েছেন আন্না এম. জারভিস (Anna M. Jarvis) নামক এক মার্কিন স্কুল শিক্ষিকা। ১৯০৭ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ছিল আন্না’র মা অ্যান মারিয়া বিভেশ জার্ভিসের মৃত্যুবার্ষিকী। সেই দিনটিকে আন্না জারভিস মা দিবস হিসেবে পালন করেন এবং রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে এই দিনটিকে মা দিবস হিসেবে পালনের জন্য ও সরকারিভাবে ঘোষণা করার জন্য চিঠি লিখতে শুরু করেন।

আন্না জারভিস তার জীবনের সুদীর্ঘ ২০ বছর কাটান পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। ১৯০৮ সালে গির্জার তত্ত্বাবধায়কের কাছে করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর পেনসিলভেনিয়া ও ভার্জিনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়।

এর পর ১৯১৪ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবসের মর্যাদা দেয়। ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি পায়।

মা দিবসে: বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রীতি

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মা দিবস হলেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় মা দিবস পালিত হয় আর রীতি-নীতিতেও রয়েছে ভিন্নতা।

আর্জেন্টিনাঃ অক্টোবর মাসের তৃতীয় রবিবার পালন করা হয় মা দিবস। দেশটিতে মা দিবসের মূল কাজ হচ্ছে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া। আর পরিবারের রান্না ও ঘরের সকল কাজ বাবা করে থাকেন।

ফ্রান্সঃ মে মাসের শেষ রবিবার সরকারিভাবে মা দিবস পালন করে ফ্রান্স। মজার ব্যাপার হলো এই দিবসে যে মায়েদের সন্তান যত বেশি তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বর্ণ (৮ থেকে বেশি সন্তান), রৌপ্য (৬-৭ টি সন্তান) ও ব্রোঞ্জ পদক (৪-৫ টি সন্তান) প্রদান করা হয়।

মেক্সিকোঃ মেক্সিকানরা ১০ মে পালন করে মা দিবস। ওই দিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে মাকে গান শুনিয়ে শুরু করে মা দিবস পালন।

মা দিবস: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
আমাদের সমাজে একটি পারিবারিক গঠনতন্ত্র আছে । মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। মা বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভালবাসার মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মা-বাবাকে সারা জীবন ভালবাসি। তারপরও মা দিবসে মায়ের প্রতি একটু বিশেষভাবে ভালবাসা প্রকাশ করার মাধ্যমে দিবসটি আমাদের দেশেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

মা দিবসে সন্তান হিসেবে আমরা যা কিছু করতে পারি আমাদের প্রিয় মায়ের জন্যঃ
  • মাকে একটু বেশি বিশ্রাম দিতে অন্যান্য দিনের চেয়ে আমরা একটু বেশি কাজ করতে পারি। মায়ের কোন প্রিয় খাবার ক্রয়/রান্না করতে পারি।
  • ও মায়ের জন্য একটি কার্ড তৈরি করতে পারি।
  • মাকে নিয়ে একটি ছবি আঁকতে পারি 
  • আমরা যারা বিশেষ কারণে মায়ের কাছে থাকতে পারছি না তারা মাকে একটি চিঠি লিখতে পারি।
Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post