বাংলা রচনাঃ সার্স, অথবা মরন ব্যাধি সার্স

সার্স কি? সার্সের উৎপত্তি, সার্সের বর্তমান অবস্থা, সার্সের কারণ, সার্সের লক্ষণ, সার্সের বিতার, সার্সের প্রতিকার, সার্সের প্রতিরােধ, সার্সে আক্রান্ত দেশসমূহ, সার্সের অর্থনৈতিক ক্ষতি, সার্স ও বাংলাদেশ, সার্স প্রতিরােধে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থা, উপসংহার।
বাংলা রচনা সার্স


বাংলা রচনা সার্স

বাংলা রচনা, ঘাতক ব্যাধি সার্স, অথবা সার্স ও বাংলাদেশ অথবা , রহস্যময় নিউমােনিয়া (সার্স)

রচনার সংকেতসমূহঃ ভূমিকা, সার্স কি? সার্সের উৎপত্তি, সার্সের বর্তমান অবস্থা, সার্সের কারণ, সার্সের লক্ষণ, সার্সের বিতার, সার্সের প্রতিকার, সার্সের প্রতিরােধ, সার্সে আক্রান্ত দেশসমূহ, সার্সের অর্থনৈতিক ক্ষতি, সার্স ও বাংলাদেশ, সার্স প্রতিরােধে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থা, উপসংহার।

ভূমিকাঃ বিশ্বে অতি সম্প্রতি নিউমােনিয়া জাতীয় এক রহস্যময় রােগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ভাইরাসবাহী অন্যান্য মারাত্মক রােগের মত এর জন্যও দায়ী ‘করােনা’ নামক এক ধরনের ভাইরাস। এই অদ্ভুত ধরনের রােগটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অবিহিত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভ্রমণকারীদের মাধমে এ রােগের বিস্তার ঘটে। ইতিমধ্যেই চীন, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, লাওস, কানাডা, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই এ রােগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা রহস্যময় এ ধরনের রােগটির নাম দিয়েছেন 'Severe Acute Respiratory Syndrome' যা সংক্ষেপে সার্স (SARS) নামে অভিহিত। হংকংয়ের একদল বিশেষজ্ঞ এ রহস্যময় রােগটির নুতন নাম দিয়েছেন 'Corona Virus Peneumonia' সংক্ষেপে সিভিপি (CVP)

সার্স কিঃ সাম্প্রতিক বিশ্বে সার্স একটি ঘাতক ব্যাধি। জীবাণু বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এটি একটি ভাইরাসজনিত রােগ। এর আসলে কোনাে একক চিকিৎসা নেই এবং বর্তমান বিশ্বে এর মৃত্যুহার আক্রান্তের ৫% অথচ সাধারণ মহামারীও ২-৩%-এর বেশি অতিক্রম করে না। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ভয়ঙ্কর মহামারী বলে আখ্যায়িত করেছে।

সার্সের উৎপত্তিঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে সার্স ভাইরাসের প্রধান বাহক হাঁস। প্রায় ৩,২০০ বছর আগে চীনে হাঁসকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মজার ব্যাপার হলাে এ হাঁসের পাকস্থলীই হচ্ছে ‘করােনা’ ভাইরাসের জন্মস্থান। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের দক্ষিণাঞ্চল খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে মানুষ, হাঁস-মুরগি, শূকর একত্রে গাদাগাদি করে বাস করে। চিকিৎসকরা মনে করেন, মানুষের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণেই এ ভাইরাস হাঁসের মাধ্যমে প্রথম এ অঞ্চলের দেহে বিস্তার লাভ করে। অতঃপর ধীরে ধীরে তা সংক্রমিত হয়ে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং সার্স ব্যাধির প্রথম উৎপত্তিস্থল হলাে চীন দেশ।

সার্সের বর্তমান অবস্থাঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে সর্বপ্রথম এই রােগটির অস্তি ত্ব লক্ষ্য করা যায়। তারপর এ রােগটি ভয়াবহ রূপ নিয়ে সানঝি প্রদেশসহ চীনের রাজধানী বেইজিং-এ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ প্রথমে এ রােগটির কথা গােপন রাখে। অবশেষে যখন এ রােগে আক্রান্ত রােগী এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন কর্তৃপক্ষ ঘােষণা করে যে, চীনেই সর্বপ্রথম এ রােগটি দেখা দেয়।

সার্সের কারণঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে বিশ্বের প্রায় দশটি দেশের তেরটি গবেষণাগারের একশ'রও বেশি বিজ্ঞানী ব্যাপক গবেষণা করে দেখতে পান যে, করােনা নামক একটি ভাইরাস এ রােগের জন্য দায়ী। এটি একটি সংক্রামক এবং সদা পরিবর্তনশীল ভাইরাস। যার সাথে নিউমােনিয়ার ভাইরাসের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। এটি মানবদেহে নয় বরং অন্য প্রাণীর দেহে বংশবিস্তার করে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণিদেহ থেকে এ ভাইরাসটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে।

সার্সের লক্ষণঃ এ রােগের লক্ষণ অনেকটা নিউমােনিয়া রােগের মত। সার্সের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। এ রােগে শাসকষ্টের মাত্রা অত্যন্ত প্রবল বলে এর নামকরণ করা হয়েছে Severe Acute Respiratory Syndrome সংক্ষেপে SARS. এ রােগের প্রধান লক্ষণগুলাে হলাে—মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর এবং সেই সাথে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, কাশি, খিচুনি, গলার অস্বস্তি ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, অরুচিসহ গায়ে র্যাশ উঠা, ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও শুকনা কাশি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকা, রােগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

সার্সের বিস্তারঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানিগণ ধারণা করেছেন যে, চীনের গুয়াংডং প্রদেশের কোনাে একটি প্রাণীর দেহ থেকে এ রােগটি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, কাশি, হাঁচি এবং সর্দির মাধ্যমে এ রােগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে। কেসস্টাডি থেকে দেখা গেছে যে, আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন, নার্স এবং ডাক্তারগণও রােগের শিকারে পরিণত হচ্ছেনএমনকি যারা আক্রান্ত ব্যক্তির আবাসস্থলের আশপাশে এসেছে তারাও এ রােগে আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি বা ছোঁয়াচে রােগ।

সার্সের প্রতিকারঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানিগণ এখন পর্যন্ত এ রােগের কোনাে প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। তারা শুধুমাত্র রােগটির ভাইরাস সনাক্ত করতে পেরেছেন। এ রােগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানিগণ চেষ্টার ত্রুটি করছেন না। এ রােগের কোনাে ওষুধ নেই বলে চিকিৎসকগণ এখন এর প্রতিকার হিসেবে শুধুমাত্র এন্টিবায়ােটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

সার্সের প্রতিরােধঃ সার্স ব্যাধির প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরােধ করাই অধিক ফলদায়ক। কেননা এর প্রতিষেধক ওষুধ এখনাে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এ রােগের প্রতিরােধ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ভ্রমণকারীদেরকে আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী বিশেষ ধরনের মুখােশ এবং দস্ত নাি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া লােকজনকে এন্টিবায়ােটিক দিয়ে হাত, পা এবং শরীর ধােয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য রক্ত গ্রহণ না করে এবং তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র এড়িয়ে চলেও এ রােগ প্রতিরােধ করা যায়।

সার্সে আক্রান্ত দেশসমূহঃ এশিয়ার কয়েকটি দেশে এ রােগ মহামারী আকারে দেখা দিলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সার্স আক্রান্ত দেশগুলাে হচ্ছে চীন, হংকং, কানাডা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, আমেরিকা এবং ভারত। এসব দেশে এ রােগে শত শত মানুষ মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে আরাে অনেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলাে ‘করােনা’ ভাইরাস দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে সার্স আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।

সার্সের অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ সার্স রােগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলাের অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিময়ে সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। আক্রান্ত ব্যবসায়ীদেরকে ভ্রমণ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত এলাকার লােকজন ব্যবসা বাণিজ্য চালাতে পারছে না। ভীত-সন্ত্রত লােকজন আক্রান্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে যা ঐ এলাকার অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সার্স ও বাংলাদেশঃ প্রতিবেশী দেশগুলােতে সার্স সংক্রমিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। নতুন একটি রােগ হিসেবে সার্সের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হয়ে দেশবাসী বিচলিত হয়। সরকারও সার্স সংক্রমণের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সার্স আক্রান্ত রােগী সনাক্ত করার জন্য বিমান বন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আক্রান্ত রােগীরা বিমান বন্দর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রােগটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্যে সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকারের সতর্কতা ও জনসাধারণের সচেতনতার কারণে রােগটি দেশে সংক্রমিত হতে পারেনি।

সার্স প্রতিরােধে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থাঃ প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার প্রতিনিয়ত লােকজনের যাতায়াতের কারণেই বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে। কোনাে আক্রান্ত রােগীর সন্ধান মেলেনি। সার্সের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। (১) আক্রান্ত এলাকা থেকে আগত যাত্রীদের সার্স আছে কি-না তা পরীক্ষা করা।
(২) সার্স প্রতিরােধে বিমান বন্দরে একটি দক্ষ চিকিৎসক দলকে সর্বদা প্রস্তুত রাখা। 
(৩) সার্স সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। 

উপসংহারঃ করােনা ভাইরাস তথা ঘাতকব্যাধি সার্স নিঃসন্দেহে একটি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী রােগ। তাই সারা বিশ্বের বিজ্ঞানিগণ এ ভাইরাসটিকে ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করার জন্য নিরলস প্ৰচষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে মানুষের অসাধ্য বলতে কিছুই নেই। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই বিশ্ববাসী সার্স রােগের ভীতি থেকে মুক্তি পাবে। যথাযথ পদক্ষেপ এবং সাবধানতাই এ ভয়াবহ মৃত্যুদূতের হাত থেকে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে বাঁচাতে পারে।
Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post