বাংলা রচনাঃ আত্মনির্ভরশীলতা অথবা দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে

বাংলা রচনাঃ আত্মনির্ভরশীলতা অথবা দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতেস্বাবলম্বনের মূল্য অথবা , দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে অথবা , মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা ।
আত্মনির্ভরশীলতা


বাংলা রচনাঃ আত্মনির্ভরশীলতা অথবা দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতেস্বাবলম্বনের মূল্য অথবা , দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে অথবা , মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা । 


রচনা সংকেত সমূহঃ ভূমিকা, আত্মনির্ভরশীলতার স্বরূপ, আজীবন স্বাবলম্বন, স্বাবলম্বন: দৈহিক ও মানস-স্বাস্থ্য বিধান, স্বাবলম্বন, দেশের চেয়ে বিদেশে, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, উপসংহার।

ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব, একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। কবির এ বাণীও সত্য, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ব্যক্তির এখানে নিজের করার কিছু নাই। ব্যক্তি নিয়েই সমাজ, খণ্ডের সমাহারে বৃহৎ। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই আমার কিছু দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে আমি নিজে যে কাজ পারি, সে কাজ আমার নিজেরই করা উচিত-অন্যের উপর নির্ভর করা সঙ্গত নয়। অপরের সাহায্য ব্যতিরেকে আত্মশক্তির উপর নির্ভর করাকে বলে আত্মনির্ভরশীলতা বা স্বাবলম্বন। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘Self help is the best help’ অর্থাৎ স্বাবলম্বনই সবচেয়ে বড় সাহায্য। এই বাবলম্বন বা নিজের উপর নির্ভরশীলতা যার নেই-ঘরের চাবিই সে রেখেছৈ পরের হাতে। তার উন্নতি পদে পদে বিঘ্নিত হতে বাধ্য। 

আত্মনির্ভরশীলতার স্বরূপঃ যে গাছ অন্যের উপর নির্ভর করে বাঁচে, তাকে বলে পরগাছা। তেমনি যে মানুষ অন্যের উপর নির্ভরশীল, তাকে বলে পরনির্ভরশীল। পরনির্ভরশীলতা আত্মনির্ভরশীলতার বিপরীত। তার আত্মশক্তি নেই, এমন নয়, কিন্তু সেই আত্মশক্তিকে সে ব্যবহার করতে চায় না। এটি তার আলস্য, জড়তা। ক্রমে এতেই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে! তার আত্মবিশ্বাসও দিন দিন কমে গিয়েছে। নিজের শক্তির অপচয় করছে, অন্যদিকে অন্যের কাছেও সে হয়ে ওঠেছে এতে একদিকে নিজের অস্ত্বিকে সে যেমন হারাচ্ছে, অপছন্দনীয়-নিন্দনীয়। 

$ads={1}
কিন্তু এটি সম্পূর্ণভাবে তার ইচ্ছেকৃত। ইচ্ছে করলেই সে কাজটি করে ফেলতে পারে। অথচ তা না করে সে নির্ভর করে বসে আছে কখন অন্যে তার এ কাজটি করে দেবে। নিজে করলে হয়তাে কাজটি আরাে আগে হতাে, সুন্দরও হতাে! হয়তাে প্রশ্ন উঠতে পারে, তার একার পক্ষে এমন কাজ সুসম্পন্ন করা কী সম্ভব ?—সবটুকু সম্ভব নয়, কিন্তু যতােটুকু সম্ভব তা করতে দোষ কী? তাতেও অনেক এগােবে। আর একটি কথা আছে, “বল বল বাহু বল।” নিজের শক্তিই বড় শক্তি-তা যতাে সামান্যই হােক। আরাে একটি অকপট সত্য, ‘বিরূপ বিশ্বে মানুষ নিয়ত একাকী। পৃথিবীতে কিছু কিছু সমস্যা আছে, একান্তভাবে নিজেরই তার সমাধান করতে হয়। সে ক্ষেত্রে বাবলম্বনের অভ্যাসটি যদি না থাকে, অন্যের উপর তার ভার ছেড়ে দেয়া হয়, তবে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তখন হয়তাে আক্ষেপ হয়, কেন নিজে করলাম না। কিন্তু তখন আর সে সুযােগ নেই! এতাে গেল নিজের কথা। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বও তাে আছে আমাদের। সেক্ষেত্রে স্বাবলম্বন অপরিহার্য। অন্যের মুখাপেক্ষী লােক পরিবারের বােঝা, সমাজের শত্রু। যে নিজের কাজ করে না, তার উপর ভরসা কিসের! জাতি হিসেবেও পরনির্ভরশীল হওয়া জাতীয় অগ্রগতির পরিপন্থী।

আজীবন স্বাবলম্বনঃ প্রকৃতির স্বাবলম্বন আমাদের শিক্ষা দেয়। আজকের ছােট চারা গাছটি নিজের শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে রস শুষে বৃক্ষে পরিণত হয়। পাখির ছানা একদিন সে নিজেই নিজের চেষ্টায় ডানা মেলে আকাশে! তেমনি ছােট্ট শিশু বার বার পড়ে গিয়েও দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করে এবং একসময় সে দৃঢ়ভাবে দু'পায়ের উপর দাঁড়াতে পারে। শিশুকে মা-বাবা সাহায্য করলেও শিশুর নিজের চেষ্টা ছাড়া শিশু হাঁটতে পারে না। তারপর শিশু বড় হয়। সে কথা বলতে শেখে, পড়তে শেখে, লিখতে শিখে। তখন থেকেই শিশুকে স্বাবলম্বী করা উচিত।  তার নিজের কাজ তাকে দিয়েই করানাে উচিত। নিজের পাঠ নিজের তৈরি করা উচিত যতটুকু তার দ্বারা সম্ভব! পড়াশােনার পাশাপাশি তার নিজের বই, পােশাক-পরিচ্ছদ গুছিয়ে রাখার অভ্যেস তার গড়ে তুলতে হবে। স্কুলের আঙ্গিনা, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখায় অংশ নেয়া উচিত। ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেলে, কর্মজীবনে স্বাবলম্বন আরাে প্রয়ােজনীয়। নিজের অর্জিত আয়ে জীবন নির্বাহ শুধু সম্মানজনক নয়, অবশ্য কর্তব্য। অনেক সময় নিজের সামর্থ্য থাকলেও অনেকে অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভর করে বাঁচতে চায়। কিন্তু তা হতে দেয়া সামাজিক অপরাধ। একবার এক ভিখারী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর কাছে সাহায্যের জন্যে এসেছিলাে। কিন্তু হযরত লােকটিকে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য না করে, তার কম্বল বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে কুঠার কিনে দিয়ে কাঠ কেটে বিক্রয় করে বাঁচার উপায় করে দিলেন। অনেক বৃদ্ধকে দেখা যায়, নিজের সব কাজ যথাসম্ভব নিজেই করছেন এমন আত্মনির্ভরশীল ও সুশৃঙ্খল। তারা অনেক যুবককেও হার মানায়। কোনাে কোনাে বাড়িতে কাজের মেয়ে নেই, গিন্নীরা নিজেরাই নিজেদের কাজ করে নেন। তাতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। কাজও সুষ্ঠুভাবে হয়। নিজের কাজ নিজের দ্বারা যত আন্তরিকতা পায়, অন্যের দ্বারা তা না হওয়াই স্বাভাবিক। 

স্বাবলম্বন: দৈহিক ও মানস-বাত্ত্য বিধানঃ আমাদের প্রত্যেকেরই কায়িক পরিশ্রম করা উচিত। কোনাে কোনাে পেশার লােকদের সারাদিন বসে অর্থোপার্জন করতে হয়। অথবা কেউ কেউ আর্থিক দিক থেকে এতাে সচ্ছল, সব কাজ অন্যে করে দেয়। কিন্তু এভাবে বসে থাকতে থাকতে কতকগুলাে ব্যাধির সৃষ্টি হয়। রক্তচাপ, হৃদরােগ এর অন্যতম। এগুলাে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে। অন্যপক্ষে প্রত্যেকেই অন্তত নিজের কাজ নিজে করে ফেললে সেই সুযােগে কিছু কঠিন পরিশ্রম হয় এবং তা শরীরের জন্যে উপকারী। কৃষক শ্রমিক-তাদের স্বাস্থ্য অনেক বেশি অটুট। তারা স্বাবলম্বী বলেই এমন কর্মঠ। শরির ভালাে থাকলে মনও ভালাে থাকে। নিজের হাতে নিজের কাজ, বাড়িঘর পরিষ্কার ইত্যাদি তার মনে পরিমার্জিত রুচিবােধেরও জন্ম দেয়। তার পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। তার মানস স্বাস্থ্যেরও এই বিধান আত্মনির্ভরশীলতা।

$ads={2}
বাবলম্বন, দেশের চেয়ে বিদেশেঃ দেশের চেয়ে বিদেশে এই বাবলম্বনের রেওয়াজ অনেক বেশি। আমেরিকার স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা গৃহভৃত্যের কাজ করে-তাদের উদ্দেশ্য একটিই-ছােটবেলা থেকে স্বাবলম্বী হতে শেখা। আমেরিকার মতাে পৃথিবীর প্রত্যেক উন্নত দেশে এই আত্মনির্ভরতা তাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। নিজের কাজ করার মধ্যে তাদের কোনাে লজ্জা নেই তা যতাে তুচ্ছই হােক না। মিথ্যা অহমিকা তাদের নেই। ব্যক্তি হিসেবে যেমন, রাষ্ট্র হিসেবেও তেমনি আজ তারা পৃথিবীর প্রধান শক্তি। আমেরিকা, রাশিয়া চীন, জাপান প্রভৃতি দেশ নিজেদের অধ্যবসায়, দৃঢ় মনােবল ও সাবলম্বন দ্বারা উন্নতির শীর্ষে উঠতে পেরেছে। বিশ্বের বাজারে সেসব দেশের উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা প্রচুর। জাপান কৃষি ভিত্তিক দেশ হয়েও আজ কারিগরী ক্ষেত্রে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। সম্পূর্ণ তার নিজের চেষ্টায়।

স্বনির্ভর বাংলাদেশঃ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তার জনসংখ্যার হার বেশি উৎপাদনের তুলনায়। তাই অনিবার্যভাবে এখানে আছে খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা। এছাড়া আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানসিকভাবেও আমরা পরনির্ভরশীল। শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমরা আগ্রহী নই। আমরা আমাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করি বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে। শিল্প ক্ষেত্রেও আমরা পরমুখাপেক্ষী, সামান্য যন্ত্রাংশও বিদেশ থেকে আনতে হয়। তাতে অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা দুর্বল থেকে যাচ্ছি, জাতি হিসেবেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি না।
আমাদের এই পরনির্ভরশীলতার পরিবর্তে “স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ একান্তভাবে অপরিহার্য। নইলে আমাদের স্বাধীনতাই অর্থহীন হয়ে পড়বে। আমাদের সম্পদ আছে জনশক্তি আছে। আমরা কেন বাবলম্বী হতে পারবাে না? অন্তত আমরা যদি নিজেদের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র নিজেদের দেশে উৎপাদন করতে পারি, তাহলেও তা লাভ ও গৌরবজনক। 

উপসংহারঃ আত্মনির্ভরশীলতা ছাড়া ব্যক্তি বা জাতি কারাে অস্তিত্ব নেই। আত্মনির্ভরশীল হতে না পারলে আত্মশক্তির বিকাশ ঘটে না। আত্মশক্তির বিকাশ না ঘটলে আত্মপরিচয়ও ঘটে না। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বাবলম্বী হয়ে নিজের, দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি ঘটানাে এবং অন্যের মনে স্বাবলম্বনের প্রেরণা জাগানাে।
Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post