যেই দশ প্রকার লোক জালিমের শামিল

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
পরম করুনাময় আল্লাহ্ তায়ালার নামে শুরু করছি। সকল পাঠক কে জানাই, 'আসসালামু আলাইকুম' 
আশাকরি আপনারা আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়াতে ভালো আছি।



প্রিয়, পাঠক। আল্লাহ তায়লা তার ইসলাম কে সকল মানুষের উপর অবতীর্ন করেছেন। এবং অনুসরণ করতে বলেছেন ইসলামের সকল আদেশ ও নিষেধ। যারা মহান আল্লাহর এই আদেশ এবং নিষেধ কে মানবেন তারাই পরকালে পাবে মহান আল্লাহর তরফ থেকে এক মহা পুরস্কার জান্নাত। আর যারা মহান আল্লাহর এই আদেশ এবং নিষেধ ও বিধান কে অমান্য করবে পরকালে ভোগ করবে কঠিন আযাব।

তো আজ আমরা, ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ.) এর বলা দশটি কথা জানবো। যেই দশটি কথা না মানলে সে জালিমের কাতারে পরবে বা জালিম হয়ে যাবে।

ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ.) এর দশটি কথা জানার আগে আমাদের জানতে হবে জালিম কারা? বা কাদের আমরা জালিম বলবো? 

জালিম হলো সেই সকল ব্যাক্তি যারা আল্লাহ্ তায়লার কোন আদেশ এবং নিষেধ এর বিরোধিতা করে, মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামিনের কোনো হুকুম কে অশিকার করে, এবং মানুষ কে সৎ ও সত্তের পথে চলতে বাধা দেয়। মূল কথা হলো জালিম আমারা সেই সকল লোকদের বলবো, যারা যারা আল্লাহ্ তায়লার কোন আদেশ এবং নিষেধের বিরোধিতা করে।

এখন আপনাদের যানাবো কোন দশটি আদেশ ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ.) আমাদের মানতে বলেছেন।

১| যে ব্যক্তি নিজের জন্য দু'আ করে, অথচ মা বাবা ও অন্য মুসলমানদের জন্য দু'আ করতে ভুলে যায়।

অর্থাৎ যিনি নামায বা অন্য কোনো ভালো কাজের পর, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের জন্য দোয়া চান, নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চান এবং আল্লাহ্ দয়া ভিক্ষা চান।  কিন্তু অপরদিকে তার পিতা মাতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান না। অন্য মুসলিম দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন না। এইরূপ ব্যাক্তি জালিমের শামিল।

২| যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ শিক্ষা করার সত্ত্বেও প্রতিদিন অন্তত ১০০ টি আয়াত তিলাওয়াত করে না।

অর্থাৎ যিনি কুরআন মাজিদ শিখেছেন, পড়তে যানেন, কিন্তু তিনি দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন। দুনিয়াবি রং-তামাশায় ব্যাস্ত থাকেন, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করার মত তার কাছে সময় নেই বা পড়েন না এইরূপ ব্যাক্তি জালিমের শামিল।

৩| যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বের হয়ে যায়, অথচ দুই রাক'আত নফল নামাযও পড়ে না ।

অর্থাৎ যিনি মসজিদে তার নিজের প্রয়োজনে প্রবেশ করছেন আবার সেই ভাবেই বের হয়ে আসছেন। আমরা অনেকে প্রস্রাব করার জন্য বা সুধুমাত্র দুনিয়াবি কাজের জন্য মসজিদে যাই আবার বের হয়ে আসি অথচ যামায়াত চলাকালিন সময় মসজিদে যাইনা এই সকল ব্যাক্তিরাও জালিমের শামিল।

৪| যে ব্যক্তি কবরের পাশ দিয়ে চলে যায়, কিন্তু কবর বাসীর জন্য দু'আ-সালাম পাঠ করে না।

এইকাজ টি আমরা সচারচার প্রাই করে থাকি, রাস্তাদিয়ে হাটার সময় আমাদের কোনো দ্যান-ঘ্রান থাকেনা। অথচ কোন মেয়ে কত সুন্দর, কে কতো আবেদন ময়ি রমনি তা ঠিকই দেখতে পাই। কোথায় কবর কোথায় মসজিদ তা আরমা চিনিনা, কবর দেখলে সালাম দেই না। তাদের জন্য দোয়া করিনা। এই সকল ব্যাক্তিও জালিমের শামিল।

কবরের পাশ দিয়ে য়াওয়ার সময় আমরা এই দোয়াটি পড়তে পাড়িঃ "আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম; আংতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিলআছারি"।

৫| যে ব্যক্তি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জুমু'আ আদায় করে না।

শুক্রবার আমরা ভাবি আজ বন্ধের দিন তাই ঘুমাবো, আজ আমাদের অফিস ছুটি। তাই হয়তো ঘুমাবো অথবা কোথাও সিনোমা দেখার প্ল্নান করি বা কোনো পার্কে ঘুরতে যাই। কিন্তু মসজিদে যাই না। আল্লাহ তায়ালা আদেশে নামায আদায় করিনা, তার হুকুম অমান্য করি এই সকল ব্যাক্তিও জালিমের শামিল।

৬| ওই সমস্ত মানুষ-যাদের বাড়ীর নিকট কোনো আলেমের আগমন হলে তারা তার কাছ থেকে কিছু শিখে না।

বর্তমান সময়ে আরমা তো কোনো আলেমদের মান এই দিতে চাইনা। আমারা বলি তাদের চেয়ে বেশি তো আমরাই শিক্ষিত, তাদের চেয়ে আমরা বেশি জানি। তাদের শ্রদ্ধা করিনা তাদের কথা মানিনা। এরূপ ব্যাক্তি জালিমের শামিল।

৭| ওই দুই ব্যক্তি-যারা দ্বীনী ভাই হওয়া সত্ত্বেও একে অন্যের নাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করে না।

আমাদের সমাজে এটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এক ভাই আরেক ভাইকে দেখতে পারেনা, এক ভাই আরেক ভাইয়ের বিপরীত।  এক ভাইযের মতে অন্য ভাই দ্বিমত। এক ভাইয়ের কাজে অন্য ভাই অখুসি। ভাই-ভাই মারামারি করে, খুনাখুনিও হয় আমাদের দেশে।  এরাও জালিমের শামিল।

৮| ওই ব্যাক্তি-যে কোন মুসলমান ভাই দাওয়াত দিলে তার গুরত্ব দেয় না।

কোনো মুসলমানের ঘরে যখন আত্মীয় স্বজন বা পারা-প্রিতবেশিদের দাওয়াত দিয়ে খারাপ আচারণ বা তাদের প্রতি গুরুত্ব না দেয়া এবঙ তাদের অবহেলা করাও জালিমের শামিল।

৯| যে যুবক সুযোগ থাকর সত্ত্বেও দ্বীনের ইলম অর্জন করা প্রয়োজন মনে করেনা।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যুবক-যুবতিরা-রা সারাদিন স্মার্ট-ফোন নিয়ে ব্যাস্ত থাকি, ফেসবুকে সময় নষ্ট করি, সিনেমা দেখি, পর্নোগ্রাফি বিডিও দেখি, রাস্তায় মা-বোনদের কটুক্তি  করি, নোংরা কমেন্ট করি,  যেনার মত খারাপ কাজ করি। কিন্তু দ্বীন শেখার পিছে সময় ব্যায় করিনা। ইমন ব্যাক্তিরাও জালিমের শামিল।

১০| ওই সব ব্যাক্তি-যে নিজে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়, কিন্তু প্রিতিবেশী উপোষ থাকে।

আমাদের প্রিতিবেশীদের খোজ-খবর রাখা আমাদের করতব্য। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়া আমাদের কর্তব্য। কিন্তু আমরা তা করিনা, আমরা ব্যাস্ত থাকি আমাদেন নিজেদের নিয়ে নিজ নিজ পরিবার নিয়ে, পারলে আরো তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করি, যারা প্রতিবেশী খোজ-খবর রাখেনা তারাও জালিমের শামিল।

শেষ কথা।

আমরা মুসলিম, মহান আল্লাহর অনুগামি বান্দা৷ তাই আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মানবো এবং আমাদের নিজ নিজ মা-বোন, ভাই, বন্ধু সকলকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিবো।


Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post