পরিপূর্ণ ইসলাম পালনে সচেষ্ট আমেরিকান নওমুসলিম আবদুল্লাহ (ইসলামধর্ম গ্রহণের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী নিয়ে সাক্ষাতকার)

পরিপূর্ণ ইসলাম পালনে সচেষ্ট আমেরিকান নওমুসলিম আবদুল্লাহ


মূলঃ ইমতিয়াজ আহমদ
অনুবাদ: আশরাফ করীম

আবদুল্লাহ সাহেব একজন আমেরিকান নও মুসলিম। তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং তার স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারের কয়েকজন ব্যক্তিও তাঁর ওসীলাতেই ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। আবদুল্লাহ সাহেবের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ। তা নিম্নে উল্লেখ করা হল।

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি আমেরিকান সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালের কথা। ইরাকের সাথে আমেরিকান নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আবদুল্লাহ সাহেবও মার্কিন সৈন্যদের সাথে যৌথ বাহিনীর সৌদি ঘাটিতে গমন করেন।
$ads={1}
সেখানে অবস্থানকালে একদিন তিনি প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী ক্রয় করতে স্থানীয় এক মার্কেটে যান। একটি দোকান থেকে কিছু সামগ্রী পছন্দ করে দরদাম ঠিক করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী এক মসজিদে আজান শুরু হলো। তখন দোকানদার তার থেকে মূল্য না নিয়ে দ্রুত মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ সাহেব দোকানদারকে মূল্য নিতে জোরাজুরি করলেন, কিন্তু তিনি কিছুতেই মূল্য গ্রহণ করলেন না। বরং শুধু এতটুকু বললেন, এখন সময় নেই। থাক, মূল্য দেয়া লাগবে না। এই কথা বলেই দোকানদার ঝটপট দোকান বন্ধ করে মসজিদের দিকে রওনা হলেন।

আবদুল্লাহ সাহেব বলেন, দোকানদারের আচরণে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। দোকানের সামনেই কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম, নিজ হাতে সামগ্রীগুলো পছন্দ করলাম, দরদামও ঠিক হলো, তাহলে দোকানদার কী কারণে মূল্য গ্রহণ করলেন? অথচ জীবনভর এটাই দেখে এসেছি যে, পাওনাদার ব্যক্তি নিজ পাওনা উসূল করার ব্যাপারে সর্বক্ষণ উদগ্রীব থাকেন। মুসলিম দোকানদারের সাথে সংঘটিত এই ঘটনাটি আবদুল্লাহ সাহেবের চিন্তার জগতে নাড়া দিল। তিনি ভাবতে লাগলেন, কি মহান সেই ধর্ম, যার অনুসারীগণ আজানের সাথে সাথে দুনিয়ার সবকিছুকে তুচ্ছ মনে করে প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে চলে যান! এটাইতো গোলাম ও মনিবের প্রকৃত সম্পর্ক! এভাবে আবদুল্লাহ সাহেব নিজ ধর্মের সাথে ইসলামের স্পষ্ট পাথর্ক্য বুঝতে পারলেন। আর এতেই তার আঁধার হৃদয়ে আলোর প্রদীপ উকি দিল। যুদ্ধ শেষে আবদুল্লাহ সাহেব যখন নিজ দেশে ফিরে এলেন, ইসলাম সম্পর্কে জানতে সর্বোচ্চ সাধনায় আত্মনিয়োগ করলেন। তখন ইসলামের প্রত্যেকটি নিয়ম-কানূন ও ইবাদত তার কাছে খুব ভালো লাগল। বিশেষ করে খৃস্টধর্মে তিন খোদায় বিশ্বাসের বিপরীতে ইসলামে এক আল্লাহর উপাসনার বিষয়টি তার হৃদয়ে নাড়া দিল। সেই থেকে আবদুল্লাহ সাহেব ঈমান এনে ইসলামের অনুসারী হওয়ার কথা ভাবতে লাগলেন। ইতোমধ্যে নিউওয়ার্কে বসবাসরত একটি মুসলিম পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি তার ইচ্ছার কথা তাদেরকে জানালে, তারা তাকে ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিভিন্ন ধরনের ইসলামী বই-পুস্তক দিয়ে সাহায্য করেন। অবশেষে আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে আবদুল্লাহ সাহেব ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। 
$ads={2}
এরপর আবদুল্লাহ সাহেবের সৌভাগ্য যে, নিজ এলাকাতেই ভালো একজন উস্তাদ পেয়ে গেলেন। যিনি আবদুল্লাহ সাহেবকে ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা দিলেন। এমনকি তাকে কায়দা কানুনসহ সহীহভাবে কুরআনে কারীমও শিখিয়ে দিলেন।

মুসলমান হওয়ার কিছুদিন পর আবদুল্লাহ সাহেব সেনা বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে বসবাসের জন্য পরিবারসহ তাওহীদ সেন্টারের পার্শ্ববর্তী মহল্লায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি ফ্যাক্স ও ফটোকপি মেশিন মেরামতের কাজ শুরু করেন। এই কাজের মাধ্যমেই তিনি নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচাদি যোগান দিতে থাকেন।

এই মহল্লাতে আসার পর আবদুল্লাহ সাহেব নিয়মিত তাওহীদ সেন্টারে জামাআতের সাথে নামায আদায় করতেন। আমি যেহেতু সেই তাওহীদ সেন্টারের পরিচালক ছিলাম, সেই সুবাদেই তার সাথে আমার পরিচয় ঘটে এবং তার জীবনের বিস্তারিত ঘটনা জানতে পারি। প্রথম পরিচয়ের সময় আবদুল্লাহ সাহেবের বয়স ছিল পঁচিশ বছরের মতো। আবদুল্লাহ সাহেব যখনই তাওহীদ সেন্টারে আসতেন, আমরা পরস্পর বিভিন্ন দ্বীনী বিষয়ে আলোচনা করতাম। এভাবে তার সাথে আমার সম্পর্ক গাঢ় হয়।

আবদুল্লাহ সাহেব যেহেতু অধিকাংশ নামাযই তাওহীদ সেন্টারে জামা'আতের সাথে আদায় করেন, তাই আমি মসজিদের খিদমতে তাকে শরীক করার মনুস্থ করলাম। একদিন নামায শেষে তাকে আজানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দিলাম। তিনি আমার প্রস্তাবে রাজী হলেন। তবে এই শর্ত দিলেন যে, মসজিদের বাইরে প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আজান দিবেন। আমি এই বলে তাকে বুঝালাম যে, এদেশে মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য রয়েছি। আর তাওহীদ সেন্টার সেই নীতিরই আওতাভুক্ত। আপনি যদি মসজিদের বাইরে আজান দেন, তাহলে এলাকাবাসীর অভিযোগ-আপত্তি শুনতে হবে তাই মেহেরবানী করে আজান আপনি মসজিদের ভেতরেই দেবেন।
$ads={1}
আবদুল্লাহ সাহেব আমার কথার পরওয়া না করে স্বীয় সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। এবার আমি নম্রতার সাথে তাকে বললাম, আবদুল্লাহ সাহেব। বহুদিন যাবত আমি তাওহীদ সেন্টারের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা সহজ কাজ নয়। নিত্যদিন নতুন নতুন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। এলাকার অমুসলিম প্রতিবেশীরা প্রায় সময় সাধারণ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করে যায়। আর তাওহীদ সেন্টারে কেবল। মুসলমানরাই নামায পড়তে আসবে। কোনো অমুসলিম নামায পড়তে আসবে। তাই অমুসলিমদেরকে আজান শোনানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমার এসব নীতি কথায় তার উপর কোনো প্রভাব হলো না। বরং তিনি পূর্বের সিদ্ধান্তেই অটল রইলেন। অগত্যা বাধ্য হয়ে আমি অপর মুসল্লীকে আজানের দায়িত্ব দিলাম। আমার জানা মতে, পুরো আমেরিকার কোথাও মসজিদের বাইরে মাইক ব্যবহারের অনুমতি নেই। তবে আমেরিকার ডারবার্ন শহরের একটি মসজিদেই শুধু মসজিদের বাইরে মাইক ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। মসজিদের কর্তৃপক্ষ মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আদালতে মামলা করলে আদালত মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষে রায় দেয়। এটা এজন্য সম্ভব হয়েছিল যে, মসজিদের আশেপাশের অধিকাংশ জনবসতি ছিল মুসলমানদের।

যদিও আবদুল্লাহ সাহেবকে আজানের দায়িত্ব দেয়া হয়নি, তবে তাকে ইশার নামাযের ইমামতীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ইশার নামাযের ইমামতীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি প্রতিদিন কিছু কিছু আয়াত মুখস্ত করতে শুরু করেন আবদুল্লাহ সাহেব কুরআনে কারীমকে অত্যন্ত মুহাব্বত করতেন। মাশাআল্লাহ তার তিলাওয়াতও বেশ চমৎকার ছিল। প্রতিদিনের নতুন ইয়াদকৃত কিরাআত দ্বারাই তিনি ইশার নামায পড়াতেন।

এটা স্বাভাবিক কথা যে, নতুন ইয়াদকৃত কিরাআতে ভুল কম-বেশী হয়েই থাকে। সেই অনুযায়ী আবদুল্লাহ সাহেবের কিরাআতেও টুকটাক ভুল পড়ছিলো। মুসল্লীরা বিষয়টাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখছিলেন না। একদিন ইশার নামাযের পূর্বে তিনি সেদিনের ইয়াদকৃত কিরাআতটি আমাকে শোনালেন। ওইদিন থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন তার ইয়াদকৃত কিরাআত আমাকে শোনাতে শুরু করেন। নিয়মিত কিরাআত শোনানোর ফলে অল্পদিনের মধ্যেই কিরাআতের ভুল-ত্রুটিগুলো অনেকটা শুধরে যায়। আবদুল্লাহ সাহেবের এই পরিবর্তনে। মুসল্লীগণও তার উপর সন্তুষ্ট হন। কিছুদিন পর তিনি নতুন এক কাণ্ড শুরু করেন। ইশার নামায দীর্ঘ কিরাআতের মাধ্যমে পড়াতে থাকেন। থাকেন। আসলে কুরআনে কারীমের সাথে তার অতি মুহাব্বতের কারণেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু এর দরুণ নামায কিছুটা দীর্ঘ হয়ে যেতো । কোনো কোনো দিন নামায শেষ হতে বিশ মিনিটও লেগে যেতো।
$ads={2}
আবদুল্লাহ সাহেবের এই কাঠির কারণে মুসল্লীরা আমার কাছে এসে অভিযোগ-আপত্তি পেশ করতে লাগলেন। আমি তাকে মুসল্লীদের এসব অভিযোগ আপত্তির কথা জানালাম। উত্তরে আবদুল্লাহ সাহেব বললেন, আমি তো কেবল ওইসব সাহাবীগণের অনুকরণ করছি, যারা ইমামতী করতেন এবং এ সময় এই এই দীর্ঘ সূরাহ পড়তেন। আমি বললাম, তবুও স্থান, কাল ও পাত্রও বিবেচনা করতে হয়। তিনি বললেন, আমি হাদীসের ওপরইতো আমল করছি। মোট কথা, আবদুল্লাহ সাহেবকে আমি কোনোভাবেই দীর্ঘ কিরাআত পড়া থেকে বিরত রাখতে পারলাম না। এরপর একদিন ফজরের সুন্নাতের পর তাকে মসজিদের কার্পেটে ডান কাত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলাম। মুসল্লীগণও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার শরীর খারাপ ভেবে আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। আলতো করে গায়ে হাত বুলিয়ে বললাম, শরীরটা কি খারাপ? তিনি বললেন, প্রিয়নবী (সা.) ফজরের সুন্নাতের পর সামান্য বিশ্রাম করতেন। আমি নবীজীর (সা.) এই সুন্নাতের অনুসরণ করছি।

বাস্তব কথা হচ্ছে, নওমুসলিম আবদুল্লাহ সাহেব যথাযথভাবে ইসলামের বিধি- 
বিধান পালনে সচেষ্ট ছিলেন। এমনকি স্বীয় পরিবারকেও তিনি ইসলামের আদলে গড়ে তুলতে যথেষ্ট সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি কুরআন ও হাদীসে যা কিছুই পড়তেন, দ্বিধাহীনভাবে তার ওপর আমল শুরু করে দিতেন। অবশ্য আলেমগণ থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শও নিতেন। আল্লাহ তা'আলা আবদুল্লাহ সাহেবকে কয়েকজন সন্তান দান করেছেন। তিনি নিজ সন্তানদেরকে সহীহভাবে কুরআন শিখিয়েছেন। তার বড় ছেলের বয়স প্রায় সাত বছর। বড় ছেলেটি কয়েক পারা কুরআন শরীফ মুখস্ত করে ফেলেছে। এইটুকু বয়সেই ছেলেটি পিতার সাথে পাঁচওয়াক্ত নামাযের জামা'আতে শরীক হয়। এমনকি ফজরের জামাআতেও সে নিয়মিত উপস্থিত হয়। ছেলেটির আচার- 
ব্যবহারও মাশাআল্লাহ অত্যন্ত ভালো। সে প্রায় আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে, বড় হয়ে আমি ইমাম হবো, ইসলামের প্রচার করবো। আমি আবদুল্লাহ সাহেবের মতো এমন নিষ্ঠাবান আর কোনো মুসল্লীকে দেখিনি যে, তিনি প্রচুর ঠাণ্ডা ও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাযের জামাআতে উপস্থিত হন। ইংরেজী ভাষাতে আবদুল্লাহ সাহেব পূর্ব থেকেই পারদর্শী ছিলেন। তবে তিনি
$ads={1}
আরবী ভাষা খুব বেশী জানতেন না। তাই আরবী ভাষা আয়ত্ব করার জন্য স্থানীয় একটি আরবী একাডেমীতে ভর্তি হন। একাডেমীর ডাঃ শায়েখ সুলাইমান সাহেবের তত্ত্বাবধানে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি আরবী আরবী ভাষাতেও পারদর্শিতা অর্জন করেন। অধিক পরিমাণে কিতাব অধ্যয়ন ও স্বীয় মেহনত-মুজাহাদার ফলে এক সময় আবদুল্লাহ সাহেব ভালো একজন বক্তায় পরিণত হন। বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলনে তাকে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ করা হতে থাকে। তিনি হৃদয়ের গভীর থেকে বয়ান করতেন। যার ফলে শ্রোতাগণ তার বয়ানে খুবই প্রভাবিত হতেন। একদিন আমি তাকে তাওহীদ সেন্টারে জুমুআর খুতবাহ দেয়ার প্রস্তাব দিলাম। কিছুক্ষণ ভেবে আমার প্রস্তাবে তিনি রাজী হলেন। জুমু'আর পূর্বে তিনি খুতবাহর বিষয়-বস্তু একবার আমাকে শোনালেন। মাশাআল্লাহ, সেদিনের জুমু'আতে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে খুতবাহ দিলেন। এটাই তার জীবনের প্রথম খুতবাহ ছিলো। জুমু'আর নামায শেষে আমি উপস্থিত মুসল্লীগণের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্তভাবে আবদুল্লাহ সাহেবের পরিচয় তুলে ধরলাম। তিনি কিভাবে মুসলমান হয়েছেন, তার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে ইবাদত বন্দেগী করে থাকে ইত্যাদি বিষয়ে মুসল্লীগণকে অবগত করলাম। মুসল্লীগণ আগ্রহের সাথে আমার কথা শুনলেন। আমার আলোচনা শেষ হলে আবদুল্লাহ সাহেব নিজের বাসায় চলে গেলেন। 

সেদিন ইশার নামাযের পূর্বে তাওহীদ সেন্টারের ইমাম মাওলানা মোঃ হানী সাহেব আমাকে বললেন, আজকে জুমু'আর নামাযের পর আবদুল্লাহ সাহেবের উপস্থিতিতে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে তার প্রশংসা করেছেন, এটা তার পছন্দ হয়নি। আবদুল্লাহ সাহেব আমাকে বলেছেন, তিনি একটি হাদীসে পড়েছেন, যে ব্যক্তি কোনো লোকের উপস্থিতিতে তার প্রশংসা করলো, সে যেনো ওই লোকের গলা কর্তন করলো। আমি ইমাম হানী সাহেবকে বললাম, আমরা আসলে একটি হাদীস সামনে রেখেই ফয়সালা দিয়ে দিই। অথচ অপর এক হাদীসের বর্ণনায় এটাও তো পাওয়া যায় যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করা কর্তব্য। এর কিছুদিন পর তাওহীদ সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ সাহেবকে প্রতিমাসে এক জুমু'আয় খুতবাহ ও বয়ানের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাওহীদ সেন্টারের অদূরে ফামিং হিলের একটি মসজিদেও তিনি মাসে এক জুমু'আর দায়িত্ব পান।

সত্য বলতে কি, উভয় মসজিদের শ্রোতাগণ প্রায় সময় একান্তে আমাকে বলতেন, আবদুল্লাহ সাহেবের খুতবাহ তাদের খুব ভালো লাগে। তাকে স্থায়ীভাবে খতীব নিযুক্ত করার ব্যাপারেও তারা আমাকে বলতেন। এ মর্মে এই কথাও বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি যে, আবদুল্লাহ সাহেব যে জুমু'আয় খুতবাহ ও বয়ান। করতেন, সেই জুমাআতে মসজিদের চাদা বেশী কালেকশন হতো। বর্তমানে আবদুল্লাহ সাহেব তাওহীদ সেন্টারের নায়িবে ইমাম ও আজানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইমাম হানী সাহেব এবং আবদুল্লাহ সাহেব এখন পর্যন্ত বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমেরিকার ব্যয়বহুল জীবনে প্রতি ওয়াক্তে টাইম টু টাইম মসজিদে এসে জিম্মাদারী পালন করাটা সহজ কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা তাদের নিঃস্বার্থ এই পরিশ্রমকে কবুল করুন। এরই মাঝে আবদুল্লাহ সাহেব একবার হজ্বে গিয়েছিলেন। হজ শেষে যেদিন তিনি দেশে ফিরলেন, সেদিন ফজরের পর দেখি, অপর একজন আমেরিকান মুসলমানসহ তিনি মসজিদে প্রবেশ করছেন। তিনি আমাকে দেখে আমার সাথে মুয়ানাকা করলেন। হজ থেকে তারা সরাসরি মসজিদে এসেছেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সফর থেকে ফিরে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতেন।

তারা মসজিদে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়লেন। আমি উভয়কে আমার বাসায় যাওয়ার জন্য খুব করে ধরলাম। আবদুল্লাহ সাহেব বললেন, সফর থেকে সোজা এখানে এসেছি, এখনো বাসায় যাওয়া হয়নি। এ মুহূর্তে মসজিদ থেকে বাসায় খবর পাঠিয়ে বাসায় যাওয়াই সুন্নাত। এই কথার পর আমি আর বাড়াবাড়ি করলাম না। তারা নিজ নিজ বাসায় চলে গেলেন। আমি ভাবতে লাগলাম, আমরা যারা জন্মসূত্রে মুসলমান, তাদের মধ্যে কয়জনই বা আছি যে, আবদুল্লাহ সাহেবের মতো পুতানুপুক্ষভাবে ইসলামের বিধি-বিধান পালন করতে সচেষ্ট থাকি!

[সুত্র] মাসিক পত্রিকা: আদর্শ নারী
Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

1 Comments

  1. f you want to check rta fines then visit my
    site:
    https://emiratesids.com/rta-fines/
    https://emiratesids.com/
    this site also information about theNOL card balance checkand provides the information about all the UAE topics.

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post