বাংলা রচনাঃ ধূমপানের কুফল

ধূমপানের কুফল বাংলা ফুল রচনা

ধূমপান


ধূমপানের কুফল বাংলা ফুল রচনা

রচনার সংকেত সমূহঃ 
সূচনা, ধূমপানের উপকরণ, ধূমপান অভ্যাসের কারণ, ধূমপায়ীর সংখ্যা,  ধূমপানের কুফল/অপকারিতা  ধূমপান প্রতিরােধ ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থা, উপসংহার, 

 সূচনাঃ “ধূমপান বিষপান” বর্তমান যুগের সাড়া জাগানাে শ্লোগান। এর সাথে বেরিয়ে এসেছে মানব মনের অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ সত্য। বেঁচে থাকার তাগিদ, সুস্থ দেহে সুস্থ মন নিয়ে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়। বিষপানের মতাে ধূমপানে তাৎক্ষণিক মৃত্যু না হলেও মানুষ তিলে তিলে পলে পলে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। এভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর এবং যন্ত্রণাদায়ক। জেনে শুনে বিষপানের মতাে মানুষ একবার ধূমপানে আকৃষ্ট হলে আর ছাড়তে পারে না। তা তার অভ্যাসে পরিণত হয়। আর এটা বদ অভ্যাস। কাজেই সুখের বশবর্তী হয়ে কখনাে ধূমপান করা উচিত নয়।

ধূমপানের উপকরণঃ  তামাক, গাজা প্রভৃতি হলাে ধূমপানের উপকরণ। তামাক ও গাজা পাতাকে শুকিয়ে কুচি কুচি করে কেটে সিগারেট শলাকা তৈরি করে তাতে আগুন সংযােগ করে ধূমপানের ব্যবস্থা করা হয়। আবার তামাক পাতার গুঁড়ােকে ঝােলা গুড় দিয়ে মেখে মন্ড করে ঐ মন্ডকে কঙ্কেতে পুরে তার উপর অগ্নি সংস্থাপন করে হুক্কার মাথার কল্কি সংযােগে ধূমপান করা যায় । আবার শুকনাে তামাক পাতাকে অনেকে পানের সংগে খেয়ে থাকে।
$ads={1}
ধূমপান অভ্যাসের কারণঃ মানুষ স্বভাবগত ভাবে অভ্যাসের দাস। ভালাের চেয়ে মন্দের প্রতিই মানুষ অতি দ্রুত আকৃষ্ট হয়। ধূমপান এমন একটি জিনিস যেটা পান করলে পেটের ক্ষুধা মিটে না কিংবা শরীরেরও কোনাে উন্নতি বিধান করে না। তবুও মানুষ এটার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর দুটো কারণ আমরা উল্লেখ করতে পারি।

প্রথমতঃ সংসর্গ দোষঃ উঠতি বয়সের ছেলেরা, অবশ্য আজকাল কিছু কিছু মেয়েরাও প্রথমে বন্ধু-বান্ধবের সংসর্গে এসে ধূমপানে খড়ি নেয়। এরপর আস্তে আস্তে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। 

দ্বিতীয়তঃ বংশানুক্রমিক অভ্যাসঃ এটা গ্রামের অশিক্ষিত পরিবারে হয়ে থাকে বাবা কিংবা দাদা ধূমপান করলে তাদের দেখাদেখি ছেলেরাও ধূমপানে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।

ধূমপায়ীর সংখ্যাঃ উন্নয়নশীল দেশে এর সংখ্যা ১০ লাখ। ধূমপায়ীর সংখ্যা উন্নয়নশীল দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। উন্নত দেশগুলােতে ধূমপানের হার যখন শতকরা ১ ভাগ হারে কমতে থাকে, উন্নয়নশীল দেশগুলােতে তা বেড়ে চলে শতকরা ২ ভাগ হারে। বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলােতে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ লোক ধূমপায়ী অথচ এদের সংখ্যা দরিদ্র দেশগুলােতে শতকরা ৪০ থেকে ৭০ ভাগ। মেয়েদের বেলায় সামগ্রিকভাবে এর পরিমাণ কম হলেও গ্রাম পর্যায়ে তামাকের ব্যবহার এদের মধ্যে প্রচুর। 
$ads={2}
ধূমপানের কুফল/অপকারিতাঃ ধূমপানের কুফল বা অপকারিতা বড় মারাত্মক। কেননা তামাকের মধ্যে নিকোটিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ থাকে। বিড়ি, সিগারেট, হুক্কার ধোয়ার সাথে এই নিকোটিন নামক বিষ ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং রক্তের সাথে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যারা অতি মাত্রায় ধূমপান করে তাদের ফুসফুসের মধ্যে আস্তে আস্তে নিকোটিন জমতে থাকে। এর ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কুড়িটি সিগারেটের মধ্যে যে পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা যদি একসঙ্গে কোনাে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে ইনজেকসন আকারে পুস করা হয় তবে সে অবধারিতভাবে মৃত্যুবরণ করবে। ধূমপান কেবল যে ধূমপায়ী ব্যক্তির পক্ষে ক্ষতিকর তাই নহে, বরং তার সংসর্গে যারা থাকে অর্থাৎ পরিবারের অন্যান্য অধূমপায়ী ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। অফিস আদালতে, যানবাহনে, কল-কারখানায়, দোকানে, রাস্তাঘাটে যেখানেই ধূমপান করা হয় সেখানেই পরিবেশ দূষিত হয়। অনেক অসাবধানী ধূমপায়ীর নিক্ষিপ্ত জ্বলত দিয়াশলাই-এর কাঠি অনেক সময় অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটায়। তাতে অনেক সময় ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। কাজেই ধূমপানের অপকারিতা বা কুফল যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা উপরােক্ত বক্তব্য থেকে সহজেই অনুমেয়। 

ধূমপান প্রতিরােধ ব্যবস্থাঃ মানুষ একবার যে অভ্যাস করে ফেলে তা সে সহজে ছাড়তে পারে না। তবুও আজকাল ধূমপান প্রতিরােধকল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানাবিধ উপায় অবলম্বন করেছে। সরকারি নির্দেশে সিগারেটের প্যাকেটে “ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর” সাবধান বাণী মুদ্রিত হয়েছে। এছাড়া ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য সরকার রেডিও, টেলিভিশনে, পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা প্রচার করছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পােজিয়াম, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, আলােচনা প্রচার করছে। এক্ষেত্রে “আমরা ধূমপান নিবারণ করি” বা আধূনিক এর কথ্য সবিশেষ উল্লেখযােগ্য বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে পােস্টার, লিফলেট মুদ্রণ করে বিলি করা হচ্ছে । স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, পেট্রোল পাম্প, নাট্যমঞ্চ, বিপনী বিতান সমূহ “ধূমপান মুক্ত এলাকা” বলে ঘােষিত হয়েছে। আমাদের দেশে বঙ্গ ভবন ধূমপান মুক্ত এলাকা। সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ, প্রমােদভবন, সভাকক্ষ এবং অনেক মন্ত্রণালয় এখন ধুমপান মুক্ত। স্থার সদস্যভূক্ত ১৬৬ টি দেশের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ টিতে নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে ধূমপান নিষিদ্ধ। রেলগাড়িতে ধূমপানমুক্ত কক্ষ এবং আসন রাখা হয়েছে। 
$ads={2}
আন্তর্জাতিক প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থাঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যভূক্ত ১৬৬ টি দেশের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ টিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি এবং ষাটের অধিক দেশে রীতিমত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ মুক্ত এলাকাগুলাে হচ্ছে: ইউরােপ ২৭ টি দেশে, পশ্চিম প্রশান্ত ১৬ টি দেশ, মহাসাগরীয় অঞ্চল ১২ টি দেশ, আমেরিকা ১৬ টি দেশ, আফ্রিকা ১৬ টি দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ৫ টি দেশ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ৪ টি দেশ।  এর কাছাকাছি দেশে স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মােটামুটিভাবে একই নিয়ম চালু করা হয়েছে। ৬৩ টি দেশে প্রমােদ কেন্দ্রে, ৫৬ টিতে সরকারি ভবনে, ২৪ টি দেশে রেস্টুরেন্টে, এমনকি ১৭ টি দেশে খেলাধূলার জন্য নির্দিষ্ট স্থানেও ধূমপান নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়েছে। এ সমস্ত বিধি নিষেধ আরােপিত হয়েছে বিগত এক দশকে।
$ads={1}
উপসংহারঃ ধূমপানের মত বদভ্যাস দূর করার জন্য সবচেয়ে বড় যেটা দরকার তা হলাে গণসচেতনা গড়ে তােলা এবং একই সাথে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করা। মানুষ ইচ্ছা করলেই কোনাে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে। পরিশেষে সােনালী কাগজে জড়ানাে মৃত্যু যাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমরা চিৎকার করে তাদেরকে বলি-“মৃত্যু নয়, জীবনের দিকে ফিরে আসুন, বাঁচার মত বাঁচুন পৃথিবীর সকল রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ উপভােগ করতে হলে সুন্দর, সুবাস্থ্য এবং নিরােগ শরীর নিয়ে বাঁচুন, ধূমপান বর্জন করুন।”
Maruf Ahmed (মারুফ আহমেদ)

আমি একজন ব্লগার এবং স্টুডেন্ট। লেখালেখি এবং টেকনোলজির প্রতি অসামান্য আগ্রহ থেকেই আমার হাত ধরে bologar.com এর সূচনা। নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে পারলে আমি আনন্দ পাই। যেকোন বয়সের পাঠক এখানে সাদরে আমন্ত্রিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post